নগরে খুন ও ২০০ ছিনতাইয়ের পর ৫ দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী গ্রেফতার : স্বীকারোক্তি

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন প্রাইভেটকার চালক আইয়ুব আলী। ৪ সেপ্টেম্বর রাতে রিকশা করে যাওয়ার পথে নগরের আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকায় আইয়ুব আলীকে বহনকারী রিকশা থামিয়ে তার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিতে চায় ছিনতাইকারীরা।
ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করায় আইয়ুব আলীকে উপুর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। আইয়ুব আলীর ব্যাগ, মানি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। ছুরিকাঘাতে আহত আইয়ুব আলী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান।
ঘটনার পরপর দীর্ঘসময় আইয়ুব আলীর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পরবর্তীতে তার পরিচয় শনাক্ত হয়। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের হয়।
কোনো প্রকার ক্লু বিহীন এ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে টানা তিনদিনের চেষ্টায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। গ্রেফতার পাঁচজনই দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডবলমুরিং থানায় ব্রিফিংয়ে ৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক।
গ্রেফতার পাঁচ ছিনতাইকারী হলো- পটুয়াখালী জেলার দুমকি থানাধীন আংগারিয়া এলাকার মো. রফিকের ছেলে মো. আল আমিন (২২), চট্টগ্রাম সদরঘাট থানাধীন পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার মো. ইউছুফের ছেলে মো. রাব্বী (২২), কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন মো. হানিফের ছেলে মো. সোহেল (২৫), কুমিল্লা জেলার তিতাস থানাধীন রঘুনাথপুর এলাকার মো. আবুল হোসেনের ছেলে মো. বাবু প্রকাশ ছোট বাবু প্রকাশ শাকিল (২০) ও লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানাধীন পেয়ারাপুর এলাকার মো. আবুল কালামের ছেলে মো. কামাল হোসেন প্রকাশ রনি (২০)। তারা সবাই সদরঘাট এলাকায় বসবাস করেন।
উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক জানান, গ্রেফতার পাঁচজন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী। তারা চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। প্রাইভেটকার চালক আইয়ুব আলীর কাছ থেকে ছিনতাই করতে গিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল তারা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পরে মারা যান প্রাইভেটকার চালক আইয়ুব আলী।
বিফ্রিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির উপ-কমিশনার (ডিবি-বন্দর) এসএম মোস্তাইন হোসেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ুন কবির, সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং জোন) শ্রীমা চাকমা ও ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেন।
ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেন বলেন, গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা পিকআপ ভাড়া নিয়ে নগরে ঘুরে বেড়ায়। পথচারী, রিকশা যাত্রী, সিএনজি অটোরিকশা যাত্রীর পথরোধ করে ছিনতাই করে। আইয়ুব আলী যখন রিকশা করে যাচ্ছিলেন তখন রিকশার সামনে পিকআপ রেখে গতিরোধ করে। পরে তার ব্যাগ, মানি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। ছিনতাইকারীরা মাদক সেবন করে, মাদকের টাকা জোগাড় করতে তারা ছিনতাই করে।
তিনি আরো বলেন, ছিনতাইকারীরা একজন চালক, দুইজন সামনে বসা থাকে এবং তিনজন পিকআপে উপরে থাকেন। সুযোগ পেয়েই গাড়ি থেকে ছিনতাই করেন। পথে তাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিজেদের ফিশারিঘাটের শ্রমিক পরিচয় দিয়ে পার পেয়ে যায়।
মো. জহির হোসেন জানান, পুলিশের হাতে গ্রেফতার প্রত্যেকেই একাধিক মামলার আসামি। তাদের নগরের সদরঘাট থানায় মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে মো. আল আমিনের বিরুদ্ধে চারটি, মো. সোহেলের বিরুদ্ধে চারটি, মো. বাবু প্রকাশ ছোট বাবু প্রকাশ শাকিলের বিরুদ্ধে দুইটি ও মো. কামাল হোসেন প্রকাশ রনির বিরুদ্ধে দুইটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে, গ্রেফতার পাঁচ ছিনতাইকারীর মধ্যে চার ছিনতাইকারী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
অভিযান পরিচালনাকারী ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্নব বড়ুয়া বলেন, গ্রেফতার পাঁচ ছিনতাইকারীর মধ্যে চার ছিনতাইকারী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ছিনতাইকারীরা বলেছেন, আইয়ুব আলীর কাছ থেকে ব্যাগ, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় টানাটানি করায় তারা তাকে উরুতে ছুরিকাঘাতে করে।
এসআই অর্নব বড়ুয়া বলেন, গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা এখন পর্যন্ত অন্তত দুইশ ছিনতাই করেছে বলে স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি তারা নগরের সার্সন রোড, কোতোয়ালী, চৌমুহনীসহ একাধিক জায়গায় ছিনতাই করে।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া চার ছিনতাইকারী হলো- মো. আল আমিন, মো. রাব্বী, মো. সোহেল ও মো. কামাল হোসেন প্রকাশ রনি।
এছাড়া এসআই অর্নব বড়ুয়া বলেন, গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা আইয়ুব আলীর কাছ থেকে যে মোবাইল ছিনতাই করেছে তা আলী আকবরের কাছে বিক্রি করেছে বলে স্বীকার করেছে তারা। তারা প্রতিটি ছিনতাইয়ে যেসব মোবাইল পায় তা সব সময় আলী আকবর নামের ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে বলে জানিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আলী আকবর ছিনতাই ও চোরাই মোবাইল ক্রেতা। নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি করা ও ছিনতাই করা মোবাইল ফোন আলী আকবর কিনে নেন। পরে আলী আকবর এসব মোবাইলের আইএমইআই নাম্বার পরিবর্তন করে বিক্রি করেন। আমরা আলী আকবরকে খুঁজছি।
এসি/বিবিএন /স্টাফ রিপোর্টার।