সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনঃ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে জমা…
আজ ০৭/০৯/২০২০ তারিখ বেলা ১২.০০ টায় মেজর (অব) সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনা তদন্তের জন্যে গঠিত কমিটি মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল’এর হাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথা ছিল আজ। কমিটির প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান একথা জানিয়ে ছিল। ১৩টি সুপারিশ ও ৫৮৬ পৃষ্ঠার সংযুক্তিসহ তৈরি ৮০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আজ সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এঘটনার তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২ অগাস্ট তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। পরদিন কমিটি পুনর্গঠন করে চার সদস্যের করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার/এডিসি (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে।
এছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক জাকির হোসেন খান ও সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির একজন প্রতিনিধি।
উক্ত তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে ৩ আগস্ট।প্রথমে সাত কর্মদিবস অর্থাৎ ১০ আগস্ট কমিটিকে প্রতিবেদন জমাদানের সময় বেধে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর প্রথমবার কমিটির সময় বাড়ানো হয় ২৩ আগস্ট পর্যন্ত। পরে কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে আবারও সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৩১ আগস্ট। এ সময়ের মধ্যে ঘটনার দ্বিতীয় অভিযুক্ত টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করতে না পারায় কমিটির মেয়াদ সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
উল্লেখ্য, ২ সেপ্টেম্বর কমিটি কক্সবাজার জেলা কারাগার ফটকে প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করে। এরপরই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি সমাপ্ত করেন এবং নির্ধারিত সময়ে তা জমা দেওয়ার ঘোষণা দেন ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। এরপর থেকেই সবাই যেন অপেক্ষায় প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য জানার।
এবিষয়ে কমিটি প্রধান মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার কমিটির বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ বৈঠকের মাধ্যমে তৈরি প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দিয়েছে যে, আমরা কমিটির সদস্যরা যেন সশরীরে হাজির হয়ে মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করি। “আমরা কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সোমবার যেদিন আমাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন, সেইদিন আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করব।”
তিনি প্রতিবেদনের বিষয়ে বলেন, প্রতিবেদনে যেসব কাজ করা হয়েছে তার একটা ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা যেসব ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, আগে তার সম্ভাব্য একটি তালিকা করেছিলাম। সেই তালিকায় সম্ভাব্য ব্যক্তি ও এরিয়া নির্ধারণ করেছিলাম। সেটি ক্রমবর্ধমান হয়ে ৬৮ জনে রূপান্তর হয় সর্বশেষ। সংশ্লিষ্ট সকলকে এখানে (তদন্ত কমিটির অস্থায়ী দপ্তর) থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, আবার ঘটনাস্থলে গিয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করেছি।”
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, একটি অপরাধ আরেকটি অপরাধের জন্ম দেয়। সিনহা হত্যাটি দেশে-বিদেশে আলোড়ন তুলেছে। ঘটনার পর তদন্ত গঠন হলে সবার দৃষ্টি প্রতিবেদন আবিষ্ট হয়ে আছে। মূল বিষয় কি উঠে এসেছে তা জানতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।
এছাড়া তদন্ত কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, “সেসব তথ্য পর্যালোচনা করেছি। কিছু সিডিআর এনেছি। সেগুলোও পর্যালোচনা করেছি। যে জব্দ তালিকা ছিল সেগুলো থানায় গিয়ে পরির্দশন করেছি। পুলিশ লাইন্সে গিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের অস্ত্রগুলো দেখেছি। বুলেটের হিসাব দেখেছি। এগুলো আমরা লিপিবদ্ধ করেছি।
“আমরা ঘটনাস্থলের মানচিত্র এঁকেছি। আমরা মরিশবুনিয়ার যে পাহাড়ে গিয়েছি, সেগুলোর একটা ভৌগলিক চিত্র নিয়ে এক্সারসাইজ করেছি। এরপরে আমার যেসব ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তাদের বক্তব্য-তথ্যগুলো আমাদের প্রাপ্ত যে অন্যান্য তথ্যগুলো আছে, এগুলোর সাথে বিশ্লেষণ করেছি।”
সিনহা হত্যা ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যে ১৩টি সুপারিশ করেছে কমিটি। আমাদের কমিটির তদন্ত কার্যক্রমের পাশাপাশি এই ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। আইনি প্রক্রিয়ায় ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ হত্যার ঘটনার জন্য কারা দোষী তা আদালতই নির্ধারণ করবেন। দায়ি ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ারও আদালতের। আমাদের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন মনে করলে বিচার কাজে ব্যবহার করার এখতিয়ার আদালতের আছে।
সর্বশেষ তিনি বলেন, একটি সুন্দর, নিরেপেক্ষ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আমার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছি। সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আমাদের হৃদয়কে যে রকম ব্যথিত করেছে, সে রকম আমাদের বিবেককেও জাগিয়ে তুলেছে।
“আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, পেশাদারিত্ব এবং চেইন অব কমান্ড মেনে চলা উচিত। আইনের রক্ষক হয়ে আমরা যেন ভক্ষককে পরিণত না হই। আমাদের হাতে অস্ত্র দিয়ে যে আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করা হয়েছে, আমরা তা যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারি। এ অস্ত্র যেন আমাদের মানব থেকে দানবে পরিণত না করে।”
সূত্রঃ তথ্য মন্ত্রণালয়।
বে অব বেঙ্গল নিউজ/ Bay of Bengal news/ স্টাফ রিপোর্টার