হামলার আগের রাতে বোমা সহ জঙ্গিরা ছিলেন চবি ছাত্রের বাসায়…
চট্টগ্রামের ২ নম্বর গেইট ট্রাফিক বক্সে বোমা বিস্ফোরণ মামলায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমরানের জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়,হামলার আগের রাতে বোমাসহ জঙ্গিরা একসঙ্গে ষোলশহর এলাকায় এমরানের বাসায় যায়।কীভাবে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে সেই বিষয়ে সেলিম প্রশিক্ষণ দেয় তাকে। পুলিশ বক্সে বোমা রেখে আসার পর ছাদেক টেলিফোনে তাকে জানায়। তবে এমরানের দাবি, সে বোমাটি বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে তার বাসার সামনে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। পরে সাইফুল্লাহ সেটি খুঁজে নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ষোলশহর ২ নম্বর গেইট ট্রাফিক বক্সে বোমা বিস্ফোরণে দুই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন আহত হন। বিস্ফোরণে ট্রাফিক বক্সটিতে থাকা সিগন্যাল বাতি নিয়ন্ত্রণের সুইচ বোর্ড ধ্বংস হয়।ঘটনার একদিন পর হামলার সঙ্গে আইএস যুক্ত বলে জঙ্গিবাদ পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ দাবি করে। এ ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া সাত জঙ্গির একজন চবি বিবিএ অনুষদের মার্কেটিং বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. এমরান।দীর্ঘদিন ধরে নগরীর ২ নম্বর গেইট এলাকায় থাকতো এমরান। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হন এমরানসহ তিন নব্য জেএমবির সদস্য। রোববার (৩ মে) নগরীর বাকলিয়া ডিসি রোডের একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।গ্রেপ্তার বাকি ২ জন হলেন মো. সাইফুল্লাহ (২৪) ও আবু ছালেহ (২৫)। আবু ছালেহ একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেক্সটাইল অনুষদের শিক্ষার্থী। সাইফুল্লাহ চকবাজার একটি কম্পিউটারের দোকানের কর্মচারী।
আরেক জঙ্গি,শাহেদ নামে (২০) কাঠমিস্ত্রিকে ২৭ জুলাই কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।ঐ ঘটনায় গ্রেপ্তার চার আসামির একজনের চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ থেকে বিভিন্ন তথ্য মিলেছে বলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম শাখার কর্মকর্তারা জানান।শাহজাহান নামে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ঐ ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানা না গেলেও তার বাবা লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের এক বাজারের মাংস বিক্রেতা বলে জানিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, “জবানবন্দিতে শাহজাহান নামে দুবাই প্রবাসী একজনের কথা বলেছে শাহেদ যিনি তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করতেন। শাহজাহান বিদেশে থাকলেও তার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”শাহেদের স্বীকারোক্তির বরাতে পুলিশ বলছে, বেশ কয়েক বছর ধরে দুবাইয়ে থাকা শাহজাহান তার বোনের মৃত্যুর পর গত বছরের মাঝামাঝি দেশে আসেন। তিনি শাহেদকে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করতেন; গান শুনতে নিষেধ করতেন। তার মোবাইলে কোনো গান পেলে তা মুছে দিতেন শাহজাহান।”
গত বছর শবে বরাতে শাহেদের সঙ্গে জহির ও মোর্শেদ নামে দুইজনের পরিচয় করিয়ে দেন শাহজাহান। ঐ জহির ও মোর্শেদ পুলিশ বক্সে বোমা হামলার অন্যতম নির্দেশদাতা বলে তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য। কাউন্টার টেরোরিজম শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ঐ দুইজনই মোটরসাইকেলের সিকিউরিটি লক, বিভিন্ন ধরনের আইইডি ও সরঞ্জাম কিনে দিয়েছিলেন। তাদের এখনও ধরা যায়নি। তারা তামীম আদনানী ও কাজী ইব্রাহীম নামে দু’জনের ওয়াজ শোনার জন্য কিছু ভিডিও দিয়েছিলেন শাহেদকে। সেই ওয়াজ শুনে শাহেদের পাশাপাশি প্রতিবেশী দোকান কর্মচারী কায়সার ও আবু ছাদেকও ‘উগ্রবাদে উৎসাহী হন’।
শাহেদ পুলিশকে বলেছে, প্রতি শুক্রবার ভোরে নামাজ পড়ে তারা মসজিদে আলোচনা করতেন। শাহজাহান বিভিন্ন সময়ে ফোন করে তাদের ডাকতেন। তারা না গেলে জহির ও মোর্শেদ তাদের মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যেতেন। সেখানে বিভিন্ন ভিডিও দেখিয়ে তাদের ‘জিহাদে’ প্রলুব্ধ করা হতো। আলাউদ্দিন, মহিউদ্দিন, হাবিব, সেলিম, কাইয়ুম নামে আরও কয়েকজন সেখানে থাকতেন। গত বছর রমজানে শাহাজাহান দুবাই চলে গেলেও অপ্রচলিত বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে তাদের সবার সঙ্গে তার যোগাযোগ হতো বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
বোমা হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহেদ জবানবন্দিতে বলেছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি সেলিম তার বন্ধু কায়সারকে ফোন করে পরদিন চট্টগ্রামে শহরে আসতে বলেন। সেলিমের নির্দেশে তারা পরদিন চট্টগ্রাম শহরে আসে। বেলা ১১টার দিকে শাহ আমানত সেতু এলাকায় সেলিমের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। রাস্তার পাশে একটি দোকানে নাস্তা করার সময় ছাদেক ও হাবিব একটি কার্টন নিয়ে দোকানে ঢোকে। সেখান থেকে তারা একসঙ্গে ষোলশহর এলাকায় এমরানের বাসায় যায়। ওই কার্টনেই বোমা ছিল যেটি পরদিন ছাদেক পুলিশ বক্সে রেখে আসে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আফতাব বলেন, “শাহেদ দুবাই প্রবাসী যে শাহজাহানের কথা বলেছে সেই বিষয়টি আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এই মামলায় প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকা আরও কয়েকজন আসামি পলাতক আছে। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে প্রবাসী শাহজাহান সম্পর্কে।”
এর আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমরানের জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, পুলিশ বক্সে বোমা রেখে আসার পর ছাদেক টেলিফোনে তাকে জানায়। কীভাবে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে সেই বিষয়ে সেলিম প্রশিক্ষণ দেয় তাকে। তবে এমরানের দাবি, সে বোমাটি বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে তার বাসার সামনে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। পরে সাইফুল্লাহ সেটি খুঁজে নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।
আমির চৌধুরী/স্টাফ রিপোর্টার/বিবিএন