সাভারে স্কুলছাত্রী নীলা রায় হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার এক, মূল আসামী পলাতক…
সাভারে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী নীলা রায় হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং সদস্য মিজানুর রহমানের এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে মানিকগঞ্জের আরিচাঘাট এলাকা থেকে ফেরী পারপারের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকান্ডের সময় সে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।
গ্রেপ্তার সেলিম পালোয়ান (২৮) বাগেরহাটের হাফেজ পালোয়ানের ছেলে। সে সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকায় পরিবারের সাথে বাস করত। নীলাকে হত্যার আগে মোবাইল ফোনে মিজানের সঙ্গে সেলিম পালোয়ানের অনেকবার কথা হয়েছে। তবে এখনো পলাতক রয়েছে মূল আসামি মিজানুর রহমান।
সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, প্রধান অভিযুক্ত মিজানুরের সহযোগী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে হত্যাকারী মিজানুর রহমানের ঘনিষ্ট সহযোগী। সেলিমকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
স্থানীয়রা জানায়, ব্যাংক কলোনী মহল্লার মাদকের স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে সাকিব ও শাকিল বাহিনী। তাদের সহযোগী ছিল সাগর, সুজন, পারভেজ, হানিফ, জয়, রাব্বি, ও যাবেরসহ অর্ধশত বখাটে যুবক। এসব স্পটে ইয়াবা, হেরোইনসহ সব ধরনের মাদক বিক্রী হয়।
প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে নীলা রায়কে তুলে নিয়ে নির্যাতন শেষে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মিজান। এঘটনায় ২১ সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা নারায়ণ রায় মিজান, তার বাবা আব্দুর রহমান, মা নাজমুন নাহার সিদ্দিকাসহ অজ্ঞাতনামাদের নামে একটি মামলা করেন।
উল্লেখ্য, গত রবিবার রাত ৯টার দিকে সাভার পৌর এলাকার কাজী মোকমাপাড়া মহল্লার প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় নীলা রায় (১৫) নামে স্কুলছাত্রীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। একটি পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। ঐ সময় ডাক্তার দেখিয়ে
বাড়ি ফিরছিল নীলা।
সে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার বালিরটেক গ্রামের নারায়ণ রায়ের মেয়ে। পরিবারের সঙ্গে পৌর এলাকার কাজী মোকমাপাড়া মহল্লার শিতল ভিলায় ভাড়া থাকত। স্থানীয় অ্যাসেড স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত নিলা। অন্যদিকে অভিযুক্ত বখাটে মিজানুর রহমান চৌধুরী (২২) স্থানীয় এক কলেজের ছাত্র। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্কুলছাত্রী নিলা রায় ও বখাটে যুবক মিজানুর রহমান পৌর এলাকার বাসিন্দা। সেই সুবাধে মিজানুর দীর্ঘদিন ধরে নিলা রায়কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু ধর্মীয় কারণে নিলা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর থেকে মিজানুর তাকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত।
রবিবার রাত ৯টার দিকে নীলা তার ভাইকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছিল। সাভার গার্লস স্কুলের পাশের গলিতে পৌঁছলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা বখাটে মিজানুর ও তার কয়েক জন সহযোগী তাদের রিকশার গতিরোধ করে। পরে জোর করে নীলা ও তার ভাইকে রিকশা থেকে নামিয়ে এ-৬১/৪ নম্বর মিজানদের পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নীলাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তার প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখায়। কিন্তু নীলা এতেও রাজি না হওয়ায় মিজানুর ক্ষিপ্ত হয়ে নীলাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এ সময় নীলার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে আসে। গুরুতর আহত নীলাকে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তার মৃত্যু হয়।
এইদিকে সাভারে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী নীলা রায় হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত মূল আসামী মিজানুর রহমানসহ জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ঝড় ওঠে।মূল আসামী এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে অনেক সামাজিক সংগঠন।
এই ব্যাপারে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাইদুর রহমান জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান,ইতিমধ্যে প্রধান অভিযুক্ত মিজানুরের সহযোগী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে হত্যাকারী মিজানুর রহমানের ঘনিষ্ট সহযোগী। সেলিমকে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।মূল আসামী মিজানকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এসি/বিবিএন /স্টাপ রিপোর্টার।